• রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন |
  • English Version

আজ ঐতিহাসিক সূর্যদী গণহত্যা দিবস

আজ ঐতিহাসিক সূর্যদী গণহত্যা দিবস

মোঃ নাসির উদ্দিন:

আজ ২৪ নভেম্বর, শেরপুর জেলার সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ঐতিহাসিক ‘সূর্যদী গণহত্যা দিবস’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ঠিক এই দিনে পাকিস্তানি হানাদাররা শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার মধ্যবর্তী সূর্যদী গ্রামে চালায় নারকীয় হত্যাকান্ড।

এদিন সূর্যদী গ্রামের মুক্তিকামী অন্তত ৪৯ জন নিরীহ মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। সাধারণ মানুষের রক্তে রঙিন হয়ে যায় এলাকা। যাদেরকে হত্যা করা হয় তাঁরা সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দাতা,সহায়তাকারী ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ। নিরীহ মানুষ হত্যা ছাড়াও এদিন পাকিস্তানি হানাদাররা সূর্যদী গ্রামসহ আশপাশের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

ফলে বাড়ি হারা হয় দুই শতাধিক পরিবারের নিরীহ মানুষ এবং স্বজন হারা হন অন্তত অর্ধশত পরিবারের নিরীহ জনগন। এর পর থেকে এই দিনটি এলেই সূর্যদী গ্রামে যেন নেমে আসে অমাবস্যা। স্বজন হারা মানুষের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস। নীরব, নিস্তব্ধ ও ভারাক্রান্ত থাকে পুরু এলাকা।

প্রত্যক্ষদর্শী জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় গ্রামবাসীদের দেওয়া তথ্যমতে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর সকাল ৮টার সময় এক নারকীয় হত্যাকান্ড চালানো হয়। তখন সূর্যদী গ্রামের বাসিন্দারা কেউ বাড়ির উঠানে শীতের মিষ্টি রোদ পোহাচ্ছিলেন, আবার কেউবা কৃষিকাজ নিয়ে মাঠে ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলেন। এমন সময় স্থানীয় রাজাকারদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিপ আর ট্রাক বোঝাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামে হামলা চালায়। এলাকার লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হানাদার বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে।

হানাদার বাহিনীর হাত থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে নিজেদের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আত্মগোপনে থাকা ‘গিয়াস কোম্পানির স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলী, আবদুল খালেক, ফজলুর রহমান, হাবীবুর রহমান, মমতাজ উদ্দিন ও আবুল হোসেন সম্মূখযুদ্ধে অংশনেন।

এদিকে সূর্যদী এ. আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে লাইনে দাঁড় করানো নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দেয় পাকিস্তানি এক সেনা কর্মকর্তা। এসময় গ্রামের একটি ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা পার্শ্ববর্তী খুনুয়া চরপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিন দূর থেকে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে থাকেন। গুলির আওয়াজ পেয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা লাইনে দাঁড় করানো লোকদের ফেলে রেখে ছুটে যায় লুকিয়ে থাকা ওই মুক্তিযোদ্ধার সন্ধানে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিন ও সূর্যদী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামানকে তারা পেয়েও যায়। পরে ধানক্ষেতেই তাদেরকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হানাদারদের এমন জগন্যতম কৃতকর্মের জন্য ২৪ নভেম্বর শেরপুরবাসীর কাছে একটি ঐতিহাসিক দিন।

সূর্যদী গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে হলেও একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৩৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে শেরপুর এলজিইডি। শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক স্মৃতিস্তম্ভটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

প্রতিবছরের ২৪ নভেম্বর তারিখে সূর্যদী গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে দিনব্যপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে শহীদদের স্মরণে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, আলোচনা সভা ও সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া উল্লেখযোগ্য। এবছরও এসব অনুষ্ঠানের ব্যতিক্রম হচ্ছেনা।

গণহত্যায় শহীদদের অনেক স্বজন আজ জীবিত নেই। কেউ কেউ বয়সের ভারে একবারেই অচল হয়ে গেছেন, আবার কেউ মৃত্যু পথযাত্রী। জীবনের এমন সময়ে এসেও সূর্যদী গণহত্যায় শহীদদের কবরগুলো চিহ্নিত করে, সেগুলো সংরক্ষণ করাসহ শহীদ পরিবারগুলোর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন তারা। তাদের দাবির সাথে ঐকমত্য পোষণ করে আসছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।