• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন |
  • English Version

শেরপুরে নকলায় করোনা প্রতিরোধসহ পাঠদানে ২শতাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রস্ততি সম্পন্ন

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:

৫৪৩ দিন বা ১ বছর ৫ মাস ২৪ দিন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরে রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) খুলছে স্কুল-কলেজ। তবে এসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও শুরুতে সব শ্রেণির পুরোদমে ক্লাস হবে না, বরং ধাপে ধাপে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাস হবে।

শেরপুরের নকলায় করোনা প্রতিরোধ করে পাঠ দানের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেড়শতাধিক, সরকারি একটি স্কুলসহ ৫০টি মাধ্যমিক স্তরের স্কুল ও মাদ্রাসা, সরকারি একটি কলেজসহ ৩টি কলেজ, ৩টি টেকনিক্যাল ও বিজনেজ ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট, একটি কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্র, ২টি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র ও অন্তত ১০টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে।

জানা গেছে, চলতি ও পরবর্তী বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করবে, আর বাকিরা ক্লাস করবে সপ্তাহে একদিন। তবে অনলাইন মধ্যমে ও টেলিভিশনে সবার ক্লাস চলবে। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর সংক্রমণের অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে ক্লাস বাড়ানো হবে বলে সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।

করোনায় লণ্ডভণ্ড শিক্ষাক্যালেন্ডার এবার সংস্কারের পালা। প্রাণঘাতী করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তিনবারের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবার পর এবার সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিলসহ সব আসবাবপত্র ও ক্যাম্পাসে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করতে সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত সময় পার করলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলা হওয়ার সংবাদে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যেন আনন্দের শেষ নেই।

শনিবার দুপুরে বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষক মাহবুব হোসাইন রূপম, শওকত হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান খান, সহকারী মৌলভী রেজাউল করিম, ফজলুল করিম, কাজিম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী শ্রেণীকক্ষের চেয়ার-টেবিল নিদৃষ্ট দূরত্বে সাজাচ্ছেন এবং সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসোইন শিক্ষার্থীদের হাত ধৌত করার জন্য নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বৃত্তাকার চিহ্ন আঁকছেন।

এছাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক-কর্মচারীরা শ্রেণীকক্ষের বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল নিদৃষ্ট দূরত্বে সাজানোসহ শেষ বারের মতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছেন।

শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলে দেয়ার ঘোষণায় মহাখুশি। দীর্ঘদিন পরে ক্লাসে একত্রিত হওয়া, নিজেদের মধ্যে লেখাপড়া ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ সৃষ্টিতে তারা যেন আত্মহারা।

শিক্ষার্থীরা জানান, করোনা মহামারিতে ঘরে বসে থেকে যেন মানসিক রোগী হয়ে পড়েছে। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সাথে বন্ধ হয়েগেছে প্রাইভেট টিউশনি। তাদের মা-বাবা ঘরের বাইরে পর্যন্ত বের হতে দেয়নি। টিভিতে আর অনলাইনের ক্লাসে তাদের চাহিদা পূরন হচ্ছেনা। তারা বলে, স্যারদের কাছ থেকে ক্লাসে সরসরি শিক্ষা গ্রহণের মজাই আলাদা। অল্পতেই অনেক শিক্ষা গ্রহন করা যায়। কিন্তু করোনার কারণে আমরা তা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। তারা আরো বলে, দীর্ঘদিন স্যার-ম্যাডাম ও বন্ধুদের কাছে পাওয়ার আনন্দ যেন বইতে পারছিনা। আল্লাহ যেন সকলকে সুস্থ রাখে এবং আমাদের এ পাওয়ার আনন্দ থেকে আর বঞ্চিত না করেন। করোনা মহামারি থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো।

বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী রেজাউল করিম জানান, মাদরাসায় প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মাল স্ক্যানার কেনা হয়েছে। এছাড়াও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশা সম্বলিত ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাত ধোঁয়ার জন্য বেসিন, পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীদের হাত ধোঁয়ার জন্য সাবান ছাড়াও প্রয়োজনীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ডরাবসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনা হয়েছে। নির্ধারন করা হয়েছে আইসোলেশন রুম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে আসন বিন্যাস ও সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ক্লাস রুটিন প্রণয়ন করা হয়েছে। স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ এবং দেখভাল করার জন্য পরিচ্ছন্নতা কমিটিও করা হয়েছে বলে জানান সহকারী শিক্ষক মাহবুব হোসাইন রূপম।

একই কথা বলেছেন সহকারী মৌলভী ফজলুল করিম, কাজিম উদ্দিন, সহকারী শিক্ষক মাহবুব হোসাইন রূপম, শওকত হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান খানসহ অনেকে। তারা জানান, শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্লাস নেওয়ার সব প্রস্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। করোনায় পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে ক্লাসের শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের নিয়ে কাউন্সিলিং করা হবে।

সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসোইন জানান, ১২ সেপ্টেম্বরে ক্লাস শুরুর কয়েক মাস আগে বিদ্যালয় ও ক্লাস পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা পাওয়ার পরেই তারা সিংহভাগ কাজ গুছিয়ে রেখেছিলেন। এখন চূড়ান্ত নির্দেশনা পাওয়ার পরে বাকি কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে তিনি জানান। একাডেমিক ও অফিস ভবন, মাঠ, অফিস ও শ্রেণী কক্ষ, বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিলসহ সকল আসবাবপত্র জীবানু মুক্ত করতে উত্তম রূপে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশনা সম্বলিত পরিপত্র সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সংশ্লিষ্ঠদের নিয়ে ভার্চুয়ালী মতবিনিময় করা হয়েছে। নো মাস্ক, নো সার্ভিস মেনে শিক্ষার্থীদের তিন ফুট দুরত্বে বসাতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষার সকল বিধান মেনে চলতে এবং তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র, আইসোলেশন কক্ষ স্থাপন, পর্যাপ্ত পানির কল ও বেসিন স্থাপনসহ বিশেষ ক্লাস রুটিন ও সরকারি সকল নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা সমূহ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সশরীরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার পর বিশেষ করে তিনটি নির্দেশনা অবশ্যই মানতে হবে। তিন ফুট দূরত্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেঞ্চ সাজানো,  পাঁচ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী বসা এবং পাঁচ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করানো, শ্রেণিকক্ষে সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।