• বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ অপরাহ্ন |
  • English Version

অসহায় বৃদ্ধা মরিয়মের পাশে দাঁড়ালো নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থা

নকলা শেরপুর) প্রতিনিধি:

 স্বামীকে হারিয়েছেন বহু বছর পূর্বেই । নিজের জীবন প্রদীপও নিভু নিভু করে জ্বলছে। যৌবনের পুরোটা সময় ব্যয় করে লালন পালন করেছেন সন্তানদের। পাঁচ সন্তানের মধ্যে চারজন ছেলে একজন মেয়ে। একমাত্র মেয়েও মারা গেছেন কয়েকবছর আগেই। প্রত্যাশা ছিলো জীবনের শেষের দিকে এসে হয়তো এই সন্তানরাই তার শেষ ভরসা হবে। জীবনের পুরোটা দিয়ে পাঁচ সন্তানকে বড় করা এই মানুষটি জীবনের শেষের দিকে এসে অনেকটাই অসহায় হয়ে গিয়েছেন । 

চার সন্তানের কেওই তার দায়িত্ব নেয়নি। জীবনের তাগিদে তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে পেট চালান তিনি। এদিক সেদিন ঘুরে দিন পার হলেও নেই রাতে গিয়ে মাথাগুজার ঠায়। অনেকটা বাধ্য হয়েই থাকেন একটা পরিত্যক্ত ঘরে। চারদিকে অনেকটা জঙ্গলের মাঝেই একটা পরিত্যক্ত ঘর। ঘরে নেই কোন ভালো মশারী, তোষক, কাথা বা বিদ্যুতের ব্যবস্থা। এক কথায় বসবাস অযোগ্য একটা জায়গায় কোন রকমে মাথা গুঁজে রাত পার করেন তিনি।

বলছি শেরপুরের নকলা উপজেলার বার্নেশ্বরদী ইউনিয়নের কবুতরমারী চার আনীপাড়া এলাকার মৃত দারোগা আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগমের কথা। কিছুদিন আগে নকলা বাজারে কচুর লতি বিক্রি করতে আসেন আনুমানিক ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মরিয়ম। এত বৃদ্ধা একজন মহিলাকে কচুর লতি বিক্রি করতে দেখে অনেকটা কৌতূহলবশত তার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট দেয় কেও একজন। তারপর থেকে রিতিমত স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয়ে যান বৃদ্ধা মরিয়ম। আস্তে আস্তে সকলের নজরে আসে তার অসহায় জীবন গল্প।

অসহায় বৃদ্ধার অসহায়ত্বের সেই পোস্ট নজর এড়ায়নি নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবু শরীফ কামরুজ্জামানের। সুদূর অষ্ট্রেলিয়ায় বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অসহায় বৃদ্ধা মরিয়মের সন্ধান পান তিনি। তারপর খোঁজ খবর নিয়ে নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থার পক্ষ থেকে বৃদ্ধ মরিয়ম বেগমকে আর্থিক সহায়তার আগ্রহ জানান তিনি।

১৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধায় নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থার সদস্যরা আর্থিক সহায়তা প্রদান করার করতে হাজির হন বৃদ্ধা মরিয়মের সেই পরিত্যক্ত ঘরে। পরে বৃদ্ধা মরিয়মকে নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থার পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন সংগঠনটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক  এবং সাধারন সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন। এসময় সংগঠনটির ত্রান ও অনুদান বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর রউফ শিবলু, নির্বাহী সদস্য মোশারফ হোসেন শ্যামল ও মো. সুজন মিয়া সহ স্থানীয় গন্য-মান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

আর্থিক সহায়তা পেয়ে বৃদ্ধা মরিয়ম বলেন, আমার তো খোঁজ নেওয়নের কেও নাই। আমি মেলা খুশি হইছি আপনেরা আমার বাড়িত আইছুন (আসছেন)।

মরিয়ম আরো জানান, ছেলেরা তাদের নিজেদের মতো ব্যস্ত। তার খোঁজ খবর নেওয়ার মতো সময় কারো নেই। জীবন বাঁচাতে হলে কিছু একটা করতে হয়। তাই কিছুদিন আগে নকলা বাজারে এসেছিলেন কচুর লতি বিক্রি করে সেই টাকায় খাবার কেনার আশায়। এদিক সেদিক ঘুরে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে গেলেও রাতে থাকার মতো ঘর না থাকায় বৃদ্ধা মরিয়ম সরকারি সহায়তা চান।

তিনি বলেন, হুনতাছি সরকার কতো মাইনষেরে ঘর কইরা দিতাছে। আমার ত থাহনের মতো কোন ঘর নাই। ভাঙ্গা ঘরে থাইক্কা রাইত পার করি। মশার জ্বালায় রাইতে একটুও ঘুমাইতে পারি না। সরকার যদি আমারে একটা ঘর কইরা দিতো আমার অনেক উপকার হইতো। জীবনের শেষ কয়ডা দিন ভালা কইরা থাকতে পাইতাম।

নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবু শরীফ কামরুজ্জামান বলেন, মূলত ফেসবুকের মাধ্যমে আমার নজরে আসে অসহায় বৃদ্ধ মরিয়ম বেগম। পরে নিজে ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নেই বৃদ্ধ মরিয়ম বেগমের। তারপর নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থার পক্ষ থেকে বৃদ্ধা মরিয়মকে সহায়তা প্রদানের আগ্রহ থেকেই আর্থিক সহায়তা দিতে সংস্থার সদস্যদের পাঠাই।

বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমের মতো অনেক অসহায় মানুষ আমাদের আশে পাশে রয়েছে। সমাজের বিত্তবান সকলের উচিত আমাদের আশে পাশের বৃদ্ধা মরিয়মের মতো লোকদের পাশে দাঁড়ানো।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।